চলুন জেনে নেয়া যাক সৌরজগতের গ্রহ গুলোর বৈশিষ্ট ও অবস্থান।
আস_সালামুয়ালাইকুম,আশা করি সবাই ভালো আছেন।সৌরজগতের গ্রহ গুলোর বৈশিষ্ট ও অবস্থান জানা আমাদের সকলেরই দরকার আমি নিচে কিছুটা আলোচনা করলাম।
আমরা পৃথিবী গ্রহে বাস করি,৪.৩৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল। চাঁদের গতির ফলেই পৃথিবীতে সামুদ্রিক জোয়ারভাঁটা হয় এবং পৃথিবীর কক্ষের ঢাল সুস্থিত থাকে। চাঁদের গতিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর গতিকে কমিয়ে আনছে। ৩.৮ বিলিয়ন থেকে ৪.১ বিলিয়ন বছরের মধ্যবর্তী সময়ে পরবর্তী মহাসংঘর্ষের সময় একাধিক গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষে গ্রহের উপরিতলের পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। গ্রহের খনিজ সম্পদ ও জৈব সম্পদ উভয়ই মানবজাতির জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এই গ্রহের অধিবাসীরা প্রায় ২০০টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সমগ্র গ্রহটিকে বিভক্ত করে বসবাস করছে।
খালি চোখে আমরা শুধু সূর্য, চাঁদ, তারা ইত্যাদি দেখতে পাই। অর্থাৎ, সৃষ্টির শুরুর দিকে মানুষ পৃথিবীর বাইরের শুধুমাত্র এই কয়টি জিনিস দেখতে পেতো। কিন্তু যখন মানুষ পৃথিবীর বাইরে যাওয়া শিখলো, তখন বুঝলো যে পৃথিবীই শুধু জগৎ নয়। এর বাইরেও একটা জগৎ আছে। আর সেটি হলো সৌরজগৎ। পৃথিবীর বাইরে কেনো বলছি?এই পৃথিবীটাও সৌরজগতেই অবস্থিত। দিনে দিনে মানুষ জানতে শিখলো, শুধু সূর্য, চাঁদ, তারাই নয়, পৃথিবীর বাইরে আরো আছে গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ ইত্যাদি। তা্ই, এই জগৎ সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করা জরুরী।
আমরা অনেকেই এই সবগুলো গ্রহের নাম পর্যন্ত জানি না। কিন্তু সৌরজগতের একটা গ্রহে বসবাস করার সুযোগ পাবার বদৌলতে হলেও কিন্তু আমাদের সৌরজগতের বাকী গ্রহগুলো সম্পর্কে জানা উচিত। তো চলুন গ্রহগুলোর অবস্থানগুলো জেনে নিই। এই গ্রহগুলো সম্পর্কে অবশ্য আমরা দুইভাবে জানতে পারি।
1. সূর্য থেকে দূরত্বের ভিত্তিতে। কারণ, সৌরজগতের শুরু বা শেষ বলে কিছু নেই। সূর্য সবার আগে দৃষ্টিগোচর হয় এর আকারের কারণে। তাই, সূর্যকে স্থির ধরে এর আশেপাশে যারা আছে সেই দূরত্ব অনুযায়ী আমরা গ্রহগুলো সম্পর্কে জানতে পারি। তো আমি সে অনুযায়ী প্রথমে গ্রহগুলোর নাম উল্লেখ করছি। সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে গ্রহগুলো হল:
বুধ (Mercury)
শুক্র (Venus)
পৃথিবী (Earth)
মঙ্গল (Mars)
বৃহস্পতি (Jupiter)
শনি (Saturn)
ইউরেনাস (Uranus)
নেপচুন (Neptune)
2. আরেক ভাবে আমরা গ্রহগুলো সম্পর্কে জানতে পারি। আর তা হলো গ্রহগুলোর আকার অনুযায়ী। এটা জানাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই চলুন দেখে নেয়া যাক গ্রহগুলোর ব্যাসার্ধের ভিত্তিতে সেগুলো কেমন হয়।
বৃহস্পতি (Jupiter) (৬৯,৯১১ কি.মি. / ৪৩,৪৪১ মাইল) – পৃথিবীর ১,১২০%।
শনি (Saturn) (৫৮,২৩২ কি.মি. / ৩৬,১৮৪ মাইল) – পৃথিবীর ৯৪৫%।
ইউরেনাস (Uranus) (২৫,৩৬২ কি.মি. / ১৫,৭৫৯ মাইল) – পৃথিবীর ৪০০%।
নেপচুন (Neptune) (২৪,৬২২ কি.মি. / ১৫,২৯৯ মাইল) – পৃথিবীর ৩৮৮%।
পৃথিবী (Earth) (৬,৩৭১ কি.মি. / ৩,৯৫৯ মাইল)
শুক্র (Venus) (৬,০৫২ কি.মি / ৩,৭৬১ মাইল) – পৃথিবীর ৯৫%।
মঙ্গল (Mars) (৩,৯৯০ কি.মি / ২,৪৬০ মাইল) –পৃথিবীর ৫৩%।
বুধ (Mercury) (২,৪৪০ কি.মি / ১,৫১৬ মাইল miles) – পৃথিবীর ৩৮%।
তো গেলো এই দুই রকমভাবে গ্রহগুলোকে জানা। এবার চলুন দেখে নেয়া যাক গ্রহগুলো সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট্য।
বুধ (Mercury)
আগেই বলেছি, এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। আর সেইসাথে আকারের দিক দিয়ে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম গ্রহ।আর অনেকটা পেনসিলভ্যানিয়া'র স্ক্র্যান্টন শহরের মতো। তবে পার্থক্য হলো এই গ্রহটির তাপমাত্রা অনেক বেশি। কারণ, সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থিত। আর গ্রহটি দেখতে পাথরের মতো। এই গ্রহের কোনো উপগ্রহ নেই। আর সূর্যের চারপাশে একবার ভ্রমণ করে আসতে এর লাগে ৮৮ দিন।
শুক্র (Venus)
ইতোমধ্যে লক্ষ করেছেন যে এটি সূর্যের দ্বিতীয় কাছের গ্রহ। ধারণা করা হয়, প্রেমের দেবী 'ভেনাস' এর নামানুসারে এই গ্রহের নামকরণ করা হয়। বেশকিছু গ্যাসের মেঘের ফলে একরকম ধোঁয়াশার মতো দেখতে গ্রহটি। এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৮৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
আর এ কারণেই কোনো মহাকাশযান এর উপর কয়েক মিনিটের বেশি অবস্থান নিতে পারে না। প্রেমের দেবীর নামে নাম হলেও সকাল বেলা পৃথিবীর আকাশে এটি দেখা গেলে বিশ্ববাসী একে 'লুসিফার' বা 'শয়তান' নামে ডাকে। তবে বাঙালীরা এদিক দিয়ে বেশ সভ্য। তাই, ভোরবেলা আকাশে এটি দেখা গেলে একে 'শুকতারা' আর সন্ধ্যার আকাশে 'সন্ধ্যাতারা' বলে ডাকে। আফসোস! এটারও কোনো উপগ্রহ নেই।
পৃথিবী (Earth)
সূর্যের তৃতীয় দূরবর্তী গ্রহ হলো আমাদের এই পৃথিবী। আর আকারের দিক থেকে ৫ম বৃহত্তম গ্রহ এটি। মার্বেলের মত দেখতে গ্রহটি। সমুদ্র আছে, গাছপালা আছে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো মানুষের মতো একটা উন্নত প্রজাতি আছে এখানে। সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ৩৬৫ দিন। তাই এই ৩৬৫ দিনকে এক বছর বিবেচনা করা হয় পৃথিবীতে। পৃথিবীর একটিমাত্র উপগ্রহ আছে। আর সেটি হলো চাঁদ।
মঙ্গল (Mars)
সূর্যের সাথে দূরত্বের দিক দিয়ে এটি আছে চার নম্বরে। দেখতে হালকা লাল-লাল। ভূ-ত্বকের বৈশিষ্ট অনেকটা পৃথিবীর মতোই। পৃথিবীর মতোই এর আগ্নেয়গিরি, বরফ এসব রয়েছে। এর রয়েছে দুইটি উপগ্রহ। একে 'লাল গ্রহ'ও বলা হয়।
বৃহস্পতি (Jupiter)
এটি আয়তনের দিক দিয়ে সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। প্রথম দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে কাঠ মসৃণভাবে কেটে গোলক বানানো হয়েছে। তবে সূর্যের সাথে দূরত্বের দিক দিয়ে পঞ্চম। এই গ্রহটি মূলত তৈরি হয়েছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দ্বারা। এর ৬৩ টি উপগ্রহ আছে। সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে প্রায় ৩৯৯ দিন। একটা মজার হিসাব আছে যেটা দ্বারা বৃহস্পতির আকার বোঝা যায়। বৃহস্পতি ব্যতীত অন্যান্য সকল গ্রহের মোট ভরের চেয়েও বৃহস্পতির ভর আড়াই গুণ বেশি।
শনি (Saturn)
সূর্যের সাথে দূরত্বের দিক দিয়ে ৬ষ্ঠ। আর আকারে ২য় গ্রহ হলো শনি। শনির একটি বলয় আছে। আর এই বলয়ের কারণেই শনি গ্রহটি এত বিখ্যাত। শনি গ্রহের মোট উপগ্রহ হলো ৬২ টি। সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ২৯.৪৬ পার্থিব বৎসর। বায়ুমন্ডলে হাইড্রোজেনের পরিমাণ বেশি। এছাড়াও অন্যান্য গ্যাসও রয়েছে।
ইউরেনাস (Uranus)
তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ সৌরজগতের।আর সূর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে সপ্তম। এই গ্রহটি মূলত আবিষ্কার করেন উইলিয়াম হার্শেল। তিনিই সর্বপ্রথম এই গ্রহটি প্রত্যক্ষ করেন। তার আগে কখনও কোথাও এর নাম অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। এর মোট উপগ্রহ হলো ২৭ টি। এই গ্রহের চারপাশেও রয়েছে অনেকগুলো বলয়। যাদের রঙও ভিন্ন ভিন্ন।
নেপচুন (Neptune)
সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত এই গ্রহটি। আর সৌরজগতের অষ্টম গ্রহ হিসেবে বিবেচিত এটি। এর উপগ্রহ ১৪ টি। গ্রহটি ভরের দিক থেকে তৃতীয় সর্ববৃহৎ গ্রহ।
এই হলো আমাদের সৌরজগৎ। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন তথ্য অাবিষ্কৃত হচ্ছে সৌরজগৎ সম্পর্কে। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে আমরা এখন প্রায় সবগুলো গ্রহ সম্পর্কেই জানতে পারছি। এছাড়াও পৃথিবীর বাইরে বাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে বের করার অনেক চেষ্টা চলছে। অনেক মহাকাশযান পাঠানো হচ্ছে সৌরজগতে। তাই গবেষণার কাজটিও হয়ে এসেছে খুবই সহজ।
সামনে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো তথ্য নিয়ে। আজকের মতো এথানেই সমাপ্ত ।আর টিউনটি কেমন লাগলো জানাতে কখনই ভুলবেন না। এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে প্রশ্নটি করুন।
কোন মন্তব্য নেই